আমার দেখা রাজকন্যা --- দ্বৈপায়ন দত্ত ১৫-১১-২০২৩
।।আমার দেখা রাজকন্যা।।
--- দ্বৈপায়ন দত্ত ১৫-১১-২০২৩
আচ্ছা, তুমি কখনো রাজকন্যা দেখেছো?
আমি দেখেছি।
তবে, সে-অর্থে সে রাজকন্যা নয় —
সব পিতার কাছে তার কন্যা যেমন রাজকন্যা —
সে তেমনই এক রাজকন্যা।
আমি সেই রাজকন্যাকেই দেখেছি।
তুমি হয়তো ভাবছ — দেখেছিলেম তারে
সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর পারে।
না না — আমি দেখেছিলেম তারে —
শরতের কোনো এক বিকেলের পড়ন্ত বেলায়
কলকল রবে বয়ে চলা জাহ্নবীর তীরে।
বাঁশের বেঞ্চিতে বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে
অদূরে গঙ্গার বুকে জেগে ওঠা চরের দিকে
অঙ্গুলি নির্দেশ করে সে বলেছিল —
ঐ চরটা আগে ছিল না।
ওই কাশ আর হোগলার খেত —
ছিল না ওর বুকে।
ওরাও বড় হয়েছে একটু একটু করে
আমিও বড় হয়েছি ওদের দেখে দেখে।
তারপর একটু থেমে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলেছিল —
আমি ওদের কাছে কখনো যাইনি!
বাবার প্রাণের রাজকন্যে যে —
যেতেই দেয়নি!
শুধু বিকেল বেলায় যখন খেলতে আসি
এই বেঞ্চিতে বসেই দূর থেকে ওদের দেখি।
কেনো জানো?
ওদের আমি ভীষণ ভালোবাসি।
শুনে, একটু হিংসে হয়েছিল আমার —
আহা, যদি কাশ কিংবা হোগলা হতাম!
সে রাজকন্যা! এক সাধারণ বাপের রাজকন্যা!
তাই তার আচরণে —
কোনো রাজকীয় গাম্ভীর্য ছিল না।
তার ঠোঁটে লেগেই ছিল হাসি।
কণ্ঠে তার মণিমাণিক্য নয় —
ছিল সাদামাঠা পুঁতির মালা —
বাবা কিনে দিয়েছিল কোনো এক রথের মেলায়।
গায়ে তার গাউন ছিল কিনা জানি না।
তবে, বাসন্তী রঙের আভরণে
ঢাকা ছিল তার গলা থেকে পা অবধি —
ঠিক যেন কোনো এক গিরিশৃঙ্গ থেকে
উঁচুনিচু পথ বেয়ে নেমে আসা
কোনো এক স্রোতস্বিনী নদী।
তার পায়ের আঙুলগুলোর দিকে
আমি মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থেকেছি।
চুলগুলো তার?
মোটেও মেঘবরণ হাঁটুভরা ছিল না।
ছিল পিঠের ওপর
হাজার বছরের বটের ঝুরির মতো ছড়ানো।
তবে, তাকে কখনো আমি ভিজে চুলে দেখিনি।
ঘুমের মাঝে চোখেমুখে যে স্নিগ্ধতা ফুটে ওঠে —
না না — তাও দেখা হয়নি।
তবে, আমি তার দুচোখে একটা বিরাট নদী দেখেছি।
না না — নদী না নদী না —
একটা অথৈ সমুদ্র দেখেছি।
কখনো কখনো নিজেকে সেই সমুদ্রের বুকে —
বিন্দুসম এক জাহাজের পথহারা নাবিক ভেবেছি।
তুমি কি তাকে চেনো?
যদি চেনো, তাকে বোলো —
আমি তাকে ভালো বেসেছি।
==============০০============
Comments
Post a Comment